
FREE DOWNLOAD মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনীইতিহাসের পুনর্পাঠ
মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে অনালোচিত
DOWNLOAD ê E-book, or Kindle E-pub » আলতাফ পারভেজ
। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্য
আলতাফ পারভেজ » 9 CHARACTERS
অংশে আলো ফেলেছেন লেখক এ গ্রন্থ
মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে অনালোচিত
। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্য
অংশে আলো ফেলেছেন লেখক এ গ্রন্থ
যখন লেখক প্রচুর বই পড়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে এবং ঘটনাকে নিজস্ব বিচারবুদ্ধি সাপেক্ষে বিশ্লেষণ করেন তখন বোঝাই যায় লেখক একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগুচ্ছেন। পুরো বইটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না পড়লে 'উদ্দেশ্য' নির্ণয় বড় কঠিন।মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনীঃ ইতিহাসের পুনর্পাঠ শিরোনামের ৬০০ পৃষ্ঠার তথ্যপূর্ণ বইটি লিখেছেন আলতাফ পারভেজ।লেখকের রাজনৈতিক একটি মতাদর্শ রয়েছে তার স্বীকারোক্তি দিয়ে নিজেই লিখেছেন তিনি জাসদ ছাত্রলীগ করতেন।চার যুবনেতার বিএলএফ মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝিতে যার নাম মুজিব বাহিনী আর জাসদের সশস্ত্র সংগঠন গণবাহিনীর আদ্যোপান্ত নিয়ে গবেষণাধর্মী আলোচনা করেছেন আলতাফ পারভেজ।বইয়ের ফ্লপের একটি জায়গায় দাবী করা হয়েছেমুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে অনালোচিত অংশে আলো ফেলেছেন লেখক এ গ্রন্থে।দাবী সত্য। এই বইতে রেফারেন্সসহ কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন লেখক যা প্রচলিত ধারণার মূলে গিয়ে আঘাত করবে পাঠকের আবার ভ্রু কুঁচকে যাবে তথ্যের বিশ্লেষণের ভঙ্গিতে।মুজিব বাহিনীর গঠন থেকে বইয়ের শুরু সমাপ্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর আগে।মুজিব বাহিনী নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত। স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস তত্ত্বের রূপকার সিরাজুল আলম খান বাকী তিন যুবনেতা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ মণি তোফায়েল আহমেদ আর আবদুর রাজ্জাক মিলে ভারতীয় জেনারেল উবানের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বিএলএফ। বিএলএফের সারা মুক্তিযুদ্ধে কতটা সক্রিয় ভূমিকা ছিল তা নিয়ে একটি প্রশ্ন রেখেছেন আলতাফ পারভেজ।এটি এই বইয়ের অনেকবড় একটি ইস্যু।রাষ্ট্রিয়ভাবে ১৫ খন্ডে মুক্তিযুদ্ধের যেসব দলিলপত্র প্রকাশিত হয়েছে একটি খন্ড তার পুরোপুরি সাক্ষাৎকার বিষয়ে হলেও তাতে মুজিব বাহিনীর সংগঠকদের কারো বক্তব্য সংরক্ষিত হয়নি। এতো বড় একটি বাহিনীর নেতৃবৃন্দের কোনো বক্তব্য জাতীয়ভাবে লিপিবিদ্যা নেই তা একদিকে যেমন হতাশার। অন্যদিকে অনুসন্ধানী মনে প্রশ্ন জাগায় কেন তাঁরা কোনো বক্তব্য দেননি।আবার অনেকে অভিযোগ করেছেন বিএলএফ যেটি পরে মুজিব বাহিনী নামধারণ করে তার অনেক সদস্য নাকী যুদ্ধ করেন ই নি। এই তথ্যের সত্যাসত্য নির্ণয়ে মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচের রিক্রুটিং ও রক্ষীবাহিনীর লিডার সরোয়ার মোল্লা ভাষ্যআমাদের প্রধান কাজ ছিল লিডারশিপ দেয়া গাইড করাপলিটিকাল কর্মকান্ড। তবে শুধু পলিটিক্স দিয়ে তো আর মানুষ ধরে রাখা যায় না যদি না তাদের শেল্টার দিতে পারি। এই কারণে তখন কিছু কিছু আ্যকশানে যেতে হয়েছে। মুজিব বাহিনীর সাথে সেক্টর কমান্ডার ও প্রবাসী সরকারের 'নেতৃত্বকেন্দ্রিক ' দ্বন্দ্ব তো সর্বজনবিদিত যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়াশোনার চেষ্টা করেন ।মুজিব বাহিনীর কর্মকান্ডের খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তর নাড়াচাড়া করেছেন লেখক। ভারতের রRAW ও স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভারতীয় বিদ্রোহীদমনে কাজ করেছে মুজিব বাহিনী। আবার পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগের কথাও লিখেছেন আলতাফ পারভেজ।দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে আর মুজিব বাহিনী বামদমন করছে খুচরা রাজাকার মারছে। কোথাও কোথাও মুক্তিবাহিনীর সাথেও সংঘাত দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয় সীমান্তের কেবল ২০ মাইলের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকবে। মোটকথা আলতাফ পারভেজ মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীকে কতকটা ভারতের সেকেন্ড অপশন হিসেবে তুলে ধরেছেন যে বাহিনীর দুটি ট্রেনিংক্যাম্পে যুদ্ধের চে' রাজনৈতিক শত্রু তথা কমিউনিস্ট মোকাবিলার সামর্থ্য ভরপুর এক শক্তি গড়ে তোলাই ছিল লক্ষ্য। আর আলতাফ পারভেজ নানা লেখনীর বরাতে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন মুজিব বাহিনীর যুদ্ধকালীন ভূমিকা যৎসামান্য মুজিব বাহিনী যুদ্ধকালীন বিরূপ কার্যক্রমের যে খতিয়ান আলতাফ পারভেজ বয়ান করেছেন তার সত্যতানির্ণয় করা সময়ের দাবী। সবসময় মুজিব বাহিনীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তাতে তাঁদের সাফল্যগাঁথাই উঠে আসে। কিন্তু আলতাফ পারভেজের লেখায় তার ছিটেফোঁটাও নেই। এক্ষেত্রে মানে দাঁড়াচ্ছে আলতাফ পারভেজও মুজিব বাহিনীর প্রতি সুবিচার করেন নি। তিনি দাঁড় করিয়েছেন এমন এক চিত্র যেখানে মুজিব বাহিনীর শুূধু কালো অধ্যায়কেই পাঠককে গেলাতে চেয়েছেন আর আলোক অধ্যায় তাঁর চোখে পড়েই নি অস্ত্র জমা দিয়েছিট্রেনিং জমা দেইনি। জ্বী মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তাঁরা যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে অস্ত্র জমা দেন জাতির পিতার পায়ের কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশে ফিরলে তাজউদ্দীন কিংবা সিরাজুল আলম খান তাঁর সান্নিধ্য পাবার আগেই শেখ মণি ও তোফায়েল আহমেদের সাথে শেখ মুজিবের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। এই নৈকট্যের খেসারত সারা জাতিকে দিতে হয়েছে সময়ের বিচারে।শেখ মণি আর সিরাজুল আলম খানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ছিল যতটা না আদর্শের তারচে বেশিবেশি প্রভাবের। মুজিববাহিনীতে সিরাজপন্থী বেশি ছিল। সিরাজপন্থীরা চাইলেন সর্বদলীয় সরকার আর মুজিব যাতে সরাসরি রাজনীতিতে না থাকেন। কিন্তু মণিপন্থীরা চাইলেন মুজিবকে সামনে রেখে সমাজতন্ত্র।ভারতীয় লুটপাটের বিরোধিতাকারী মেজর জলিল আলী হায়দার জিয়াউদ্দিন ও বিপ্লবে বিশ্বাসী কর্ণেল তাহেররা একত্রিত হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ছায়াতলে। যেখানে আগে থেকেই ছিলেন আসম আব্দুর রব কাজী আরেফ শাজাহান সিরাজরা যাঁদের মূল ছিলেন সিরাজুল আলম খান।১৯৭২ সালের অক্টোবরের শেষে জাসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার একই সালে জেআরবি জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। এই মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা বেশিরভাগ ছিলেন মুজিববাহিনী কাদেরিয়া বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য। তাঁদের রাজনৈতিক আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত এবং একমাত্র শেখ মুজিবের কাছেই তারা দায়বদ্ধ ছিল। এই বাহিনীকে ভারত ট্রেনিং দিত যেমন দিত মুজিব বাহিনীকে। লেখক একে নকশাল দমনকারী ভারতীয় বাহিনীর সাথে তুলনা করেছেন।সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেন বঙ্গবন্ধু আরেকটি বাহিনী গড়লেন তার ব্যাখা নিয়ে অনেক ভালো মন্দ ব্যাখা আছে সেদিকে যাচ্ছি না।লেখক রক্ষীবাহিনীর দেশব্যাপী নির্যতনকে পাঠককের সামনে তুলে ধরতে খুব পরিশ্রম করেছেন। কতটা নিষ্ঠুর ও অমানবিক ছিল রক্ষীরা তার বর্ণনায় ঘাটতি নেই।কিন্তু জাসদের গণবাহিনীর রক্ষীবাহিনীকে আওয়ামীলীগ যুবলীগ লালবাহিনীর মোকাবিলাকে কেন যেন সেভাবে তুলে ধরেন নি। জাসদের কর্মীদের ওপর হামলার তীব্রতা বুঝতে এই বইটি পাঠের বিকল্প নেই। আবার একই লেখক আওয়ামীলীগের কর্মী হত্যাকে হালকাচাঁলে লিখতে গিয়ে বইটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে কমিয়ে দিতে কসুর করেন নি।শেখ মণি তাঁর বাংলার বাণী পত্রিকায় লিখেছিলেনআইনের নয় মুজিবের শাসন চাই শেখ মণির এই চাওয়াকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের ই আরেক বিচ্ছেদ্য অংশ যারা জাসদ প্রতিষ্ঠা করেছে তাদের রক্ত ঝরিয়েছে রক্ষীবাহিনী যুবলীগ আর ছাত্রলীগ।আর মণির তত্ত্বকে সামলাবার নামে জাসদ স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকে বিপদে ফেলেছে 'বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র' প্রতিষ্ঠার অভিলাষে জাসদ অস্ত্রধারী বাহিনী গঠন করে তরুণদের বিভ্রান্ত করেছে অথচ সারা বইতে অনেকের ভাষ্যে গিয়েছে জাসদের মূলনায়ক সিরাজুল আলম খান স্রৈফ ঝোঁক আর রাগের বশে গড়েছিলেন জাসদ।আলতাফ পারভেজ মুজিব বাহিনীর অধ্যায়কে লিখেছেন একপেশেভাবে গণবাহিনীকে বাঁচাতে গিয়ে ভিলেন করেছেন বিপক্ষের অনেককে। তবুও এই বই ইতিহাসকে ভিন্নভাবে জানায় বোঝায় শেখায় ইতিহাসের আস্তাঁকুড় ঘেঁটে আপনাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে প্রচলিত নায়ক মহানায়কদের। বইয়ের শেষে লেখক পরিশিষ্ট সংযোজন করেছেন যা বইটিকে সুসমৃদ্ধ করেছে বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটিকে বাড়ানোর চেষ্টা প্রশংসনীয়। আলতাফ পারভেজ মুজিব বাহিনীর অধ্যায়কে লিখেছেন একপেশেভাবে গণবাহিনীকে বাঁচাতে গিয়ে ভিলেন করেছেন বিপক্ষের অনেককে। তবুও এই বই ইতিহাসকে ভিন্নভাবে জানায় বোঝায় শেখায় ইতিহাসের আস্তাঁকুড় ঘেঁটে আপনাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে প্রচলিত নায়ক মহানায়কদের। হোক খানিকটা একপেশে তবুও এই ধরনের লেখনী আরো চাই। আলোচনা করুক লোকে তীব্র একপেশে সমালোচনা হোক একাডেমিক ভিত্তিতে। তাতেই একদিন আসল তথ্যের খোঁজ পাবে পাঠককরা।